ঢাকা ওয়াসায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৫০ জনের নিয়োগ: স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক | NewsCalled24.com
ঢাকা ওয়াসায় সম্প্রতি কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই ১৫০ জনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সহকারীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগ সামনে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে হলো এই নিয়োগ?
বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করা হয়। তবে, ঢাকা ওয়াসার সাম্প্রতিক এই নিয়োগ কোনো প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার উচ্চপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এই ১৫০ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো পরীক্ষা দেননি, এমনকি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই এই নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
একজন ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থী বলেন, "আমরা বছরের পর বছর ধরে চাকরির জন্য পরীক্ষা দিচ্ছি, অথচ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই যদি এত মানুষ চাকরি পায়, তাহলে আমাদের জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে চাকরি পাওয়ার সুযোগ কোথায়?"
সরকারি বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন?
২০১৮ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়, যেখানে স্পষ্ট বলা হয় যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী বা মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু, এই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই ঢাকা ওয়াসা এ ধরনের নিয়োগ সম্পন্ন করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নিয়োগ কেবল অনৈতিকই নয়, এটি সুস্পষ্টভাবে সরকারি নিয়োগ নীতিমালার লঙ্ঘন। এতে মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এই নিয়োগ সম্পর্কে আমরা আগে কিছু জানতাম না। উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি।"
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ছাড়া এভাবে নিয়োগ দেওয়া হলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান বলেন, "একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেধাবী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।"
বাংলাদেশে অতীতেও এ ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালীদের সুপারিশে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ অনেক আগেই উঠেছে। তবে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে তথ্যপ্রবাহের কারণে এই অনিয়মগুলো সহজেই জনগণের নজরে আসছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। চাকরি প্রত্যাশী তরুণ-তরুণীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "আমরা এত কষ্ট করে পড়াশোনা করি, বিসিএস এবং অন্যান্য সরকারি চাকরির জন্য দিনের পর দিন প্রস্তুতি নেই, অথচ কেউ কোনো পরীক্ষা না দিয়েই চাকরি পেয়ে যায়! তাহলে আমাদের পরিশ্রমের মূল্য কোথায়?"
আরেকজন মন্তব্য করেন, "এটা কি তাহলে প্রভাবশালীদের জন্য আলাদা নিয়ম? সাধারণ জনগণ কি কখনো সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবে না?"
এছাড়া, অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন।
ঢাকা ওয়াসার ভূমিকা
ঢাকা ওয়াসার পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের অনিয়ম আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে মেধার মূল্যায়ন হবে না এবং দুর্নীতি আরও গভীর হবে।
একজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, "এটি শুধু একটি নিয়োগ নয়, এটি গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।"
প্রশ্নবিদ্ধ ভবিষ্যৎ
সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যদি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে প্রশাসনের দক্ষতা কমে যাবে।
বাংলাদেশের বর্তমান তরুণ সমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। ফলে, চাকরির প্রতিযোগিতা দিন দিন কঠিন হচ্ছে। কিন্তু যখন সুপারিশের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন সাধারণ চাকরি প্রার্থীরা হতাশ হন।
সরকারের উচিত দ্রুত এই নিয়োগ নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রয়োজনে এই নিয়োগ বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা উচিত।
উপসংহার
ঢাকা ওয়াসার ১৫০ জনের এই অনিয়মিত নিয়োগ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার এই সময়ে, এ ধরনের অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া মেধাবী তরুণদের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এ ধরনের ঘটনা দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে চাকরি বাজারে আরও বড় দুর্নীতি দেখা দিতে পারে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে দ্রুত স্বচ্ছতার ব্যবস্থা নিতে হবে।
NewsCalled24.com-এর সঙ্গে থাকুন আরও আপডেটের জন্য।
✍ রফিকুল ইসলাম সুমন
সম্পাদক, NewsCalled24.com
No comments
Post a Comment